চাকরি পেতে কি কি জানা উচিত
বর্তমান বাজারে চাকরি পাওয়া সোনার হরিণ পাওয়ার মত দূর্লভ। একটা ভালো চাকরি পাওয়া আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতই আনন্দের ব্যাপার। আগের দিনে মানুষকে জোর করে চাকরি করাতে হত আর এখন ভাল সার্টিফিকেট, যোগ্যতা থাকার পরও চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। ঘুরতে হবেও না বা কেন যে হারে সার্টিসার্টিফিকেট ধারীর সংখ্যা বাড়তেছে সে হারে কর্মসংস্থান বারছে না।বর্তমানে কর্মসংস্থানের থেকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে,তাইত চাকরির বাজার অনেক প্রতিযোগিতামূলক।
কর্মসংস্থান বাড়ছে না যেমন সমস্যা তেমনি যে কর্মসংস্থান আছে উপযুক্ত জ্ঞানের অভাবে আমরা সঠিক ব্যবহার করতে পারছি না। অনেক সময় দেখা যাই আমাদের কোম্পানিগুলো উপযুক্ত কর্মীর অভাবে দেশের বাইরে থেকে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে যা অনেক দুঃখজনক।ভালো চাকরি পাওয়ার কিছু পূর্বশর্ত আছে যেগুলো না জানলে ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। আজ আলোচনা করব চাকরি পেতে হলে কি কি জেনে রাখা উচিত।
চাকরির জন্য সাধারণ জ্ঞান :বাংলাদেশর বিষয়াবলী গুরুত্ব
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হলো যেগুলো চাকরি পেতে হলে অবশ্যই জেনে রাখতে হবে:
- সিভি তৈরীতে বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে:
- সিভিতে আপনার সদ্যতোলা ছবির সাথে পরিচয় দেওয়ার পরে আসে আপনার ক্যারিয়ার বা অবজেক্ট। সিভিকে অবশ্যই নিয়োগকর্তার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। আবার সিভি এমনভাবে তৈরি করা যাবে না যে নিয়োগকর্তা আপনাকে ওভার স্মার্ট ভাবে।আপনার রেজাল্ট যদি তুলানামূলক খারাপ হয় তাহলে আগে এক্সপেরিয়েন্স পরে একাডেমিক যোগ্যতা উল্লেখ করা উচিত।আর যদি এক্সপেরিয়েন্স না থাকে তাহলে রেজাল্ট আগে দিতে হবে। রেজাল্ট ও যোগ্যতা ভালো হলে সুন্দরকরে ব্যাখা করে দিতে হবে । ভালো না হলে ব্যাখা করার প্রয়োজন নাই।বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, জাতীয়তা এগুলো শেষে লিখবেন।রেফারেন্সে যার নাম দিবেন তার সাথে অবশ্যই বলে রাখবেন। ইন্টারভিউয়ের সময় অবশ্যই সাথে এক কপি ছবি,এক কপি সিভি,কলম নিতে ভুলবেন না।
- শিক্ষিত নয় নিজেকে গড়ে তুলতে হবে যোগ্যরুপে:
- চাকরির বাজারে যোগ্য লোকের গুরুত্ব অপরিসীম। কোন কোম্পানির নিয়োগকর্তা যখন অনেকগুলো প্রার্থীর মধ্যে থেকে কর্মী বাছাই করে অবশ্যই যার যোগ্যতা বেশি তাকে নিয়োগ দিবে।একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং নেওয়া যেতে পারে বিশেষ করে প্রযুক্তির জ্ঞান থাকতে হবে।
- চাকরি খোঁজ করা এবং বুঝে আবেদন:
- একটি ভালো চাকরি খুঁজে পাওয়া খনিতে হীরা খুঁজে পাওয়ার সমান।সব সময় চাকরির সন্ধান রাখতে হবে। যদি আপনার সামনে অনেকগুলা ভালো চাকরির অফশন আসে সেই চাকরটার জন্য আবেদন করবেন যেটা আপনার মনের মত,যেটা আপনার ভ্যালুর সাথে যাই।
- নেটওয়ার্ক ও যোগাযোগ :
- ধরুন আপনার অফিসে ১ জন কর্মী লাগবে,আপনি নিশ্চই ১ জনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিবেন না। তখন আপনি নিয়োগ দিবেন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। আপনার ফ্রেন্ডস,কলিগ,কর্মী ও পরিচিত জনদের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দিবেন। তাই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন যাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে লিংক আছে। শুধু নেটওয়ার্ক গড়ে তুললেই হবে না নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
- নিজেকে আপডেট রাখা:
- ভালো চাকরি পেতে হলে অবশ্যই নিজেকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা শিখতে হবে।আপনি এখন কোন ফোন ব্যবহার করেন নিশ্চই এন্ড্রয়েড। এখন আপনাকে বাটন ফোন চালাতে বললে কেমন লাগবে। ঠিক ভালো চাকরি পেতে হলে আপনাকে বাটন ফোন থেকে এন্ড্রয়েডের রূপ নিতে হবে,নতুবা বাটন ফোনের মত আপনাকে ছুঁড়ে ফেলা হবে।বর্তমান প্রযুক্তির যুগে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে প্রতিনিয়ত যুগের সাথে নিজেকে আপডেট করতে হবে।
- সমালোচনাযোগ্য হোন:
- আমরা কেই ই সমালোচনা পছন্দ করিনা। কিন্তু নিজেকে সমালোচনাযোগ্য না করতে পারলে শুধরানোর সুযোগ থাকে না।সব সময় দক্ষ মানুষের কাছে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করুন। তাঁদের থেকে পরামর্শ নিন কিভাবে নিজেকে উন্নতি করা যাই।
- সবসময় নিজের পছন্দসই কাজ করা থেকে বিরত থাকুন:
- আমরা প্রায়ই বলতে শুনি তুমি যে কাজটা পছন্দ কর সেটা কর।কিন্ত সবকিছু আপনার মত স্থীর থাকবে না,আপনাকে অবশ্যই পরিবর্তনশীল মনের অধিকারী হতে হবে। কোম্পানিগুলো কখনই এক প্রোডাক্ট নিয়ে বসে থাকবে না ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী তাদের পণ্য ছাড়তে হয় বাজারে। তাই আপনি এক জিনিস নিয়ে বসে থাকলে মার্কেটে টিকে থাকতে পারবেন না।
- নিজের অবস্থান তৈরী করুন:
- সব সময় একটা ভালো চাকরির স্বপ্ন দেখা আর চাকরি পাওয়ার পর একই অবস্থান এ থাকা এমন মানসিকতা নিয়ে আপনি বেশিদিন টিকে থাকতে পারবেন না।চাকরিক্ষেত্রে আপনার নতুন অবস্থান তৈরী করুন। উপরের পজিশনে যারা আছেন তাঁদের থেকে শেখার চেষ্টা করুন।
- পছন্দসই কোম্পানি গুলোর সেরা ফ্যান হিসাবে প্রকাশ করুন:
- নিজেকে ইন্টারভিউ বোর্ডে এমনভাবে প্রকাশ করুন যে আপনি তাঁদের কোম্পানির অন্যতম ফ্যানদের মধ্যে একজন।কথাবার্তার মাধ্যমে বুঝান যে আপনি এই কোম্পানী,কোম্পানির প্রোডাক্ট, কালচার সবকিছু অনেক পছন্দ করেন।
- কিভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয় শিখুন :
- মনোযোগ দিয়ে শুনতে জানা একধরনের শক্তিশালী হাতিয়ার। বিজ্ঞরা সবসময় অন্যদের কাছ থেকে মনোযোগ সহকারে শুনে, নতুন নতুন বিষয়ে জানে। ইন্টারভিউ বোর্ডে একজন চাকরিপ্রার্থীর প্রথম কাজ মনোযোগ সহকারে শোনা,কখন প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে জানা,কখন থামতে হবে কখন চুপ থাকতে হবে এই বিষয়গুলো আয়ত্ত করা।তাই চাকরি প্রার্থীকে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে শোনার অভ্যস্থ হতে হবে।
- আপনি যে চাকরিটা পছন্দ করেন সবসময় সেই চাকরির পিছনে ছুটা থেকে সংযত থাকুন:
- অনেক সময় আমরা পছন্দের চাকরির পিছনে ছুটতে ছুটতে মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলি। হয়ত এক সময় আমাদের পছন্দের চাকরি পাওয়ার মত আমাদের আর বয়স থাকে না।পৃথিবীতে ভালো চাকরির অভাব নেই তাই একটা চাকরির পিছনে না ছুটে কোন একটা ভালো জব নিয়ে তারপর পছন্দের চাকরির পিছনে ছুটা উচিত।
- উপর থেকে নিচে নামুন:
- আমরা কখনোই নিজের পজিশনের গুরুত্ব দেই নি যখন ভালো পজিশনে চলে যাই।কিন্তু নিচের পজিশনে নজর দিলে অনেক নতুন নতুন জিনিস শেখা সম্ভব। নিচের পজিশনে কি কি নতুন নতুন যোগ হচ্ছে দেখুন,যাঁরা অপেক্ষাকৃত নিজ পজিশনে জব করে তাঁদের সাথে মিশুন,তাঁদের কাজ বুঝতে চেষ্টা করুন।
বর্তমান শিক্ষিতের হার বেড়ে যাচ্ছে, তাই চাকরির প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে। ভালো চাকরি পেতে হলে অবশ্যই অনেক বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কখন বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে,আবেদনের লাস্ট ডেইট,যোগ্যতা এসব বিষয়ে সবসময় তৎপর থাকতে হবে। আমাদের উপরের টিপসগুলো ফলো করলে উপকার হবে বলে আশা করি।