আপনি কি ভাইভা বোর্ডে ভালো করে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারছেন না? ভাইভা বোর্ডে নার্ভাসনেস এর কারণে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরি হারাচ্ছেন?।
অনেক সময় অনেকেই যোগ্যতা থাকার সত্ত্বেও ভাইভা বোর্ডে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ভালো ফলাফলের পাশাপাশি স্মার্টনেস,আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি, নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।অনেকেই ভাইভা বোর্ডে ঢুকে নিজের অজান্তেই নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করে আসেন । সেক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা ২-৩ টি সৌজন্যমূলক প্রশ্ন করে বিদায় দিয়ে দেন।ভাইভা বোর্ডে অনেক নিয়মকানুন আছে। পোশাকও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ভাইভা বোর্ডে ভালো করার জন্য তাই জেনে নিন কিছু কৌশল।
ভাইভা বোর্ডের নিয়ম কানুন
- জীবনবৃত্তান্ত ভালো হওয়া চাই:
- ভাইভা শুরু করার আগে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হতে পারে। জীবনবৃত্তান্ত দেওয়ার সময় ভাষার ব্যবহার এবং বানান খেয়াল রাখতে হবে। ভালো অর্জনগুলো আগে দেখাতে হবে। অবশ্যই সঠিক তথ্য দিতে হবে। মিথ্যা তথ্য দিলে নিয়োগকর্তারা নিয়োগ দেওয়ার পরে জানলেও চাকরি চলে যেতে পারে।
- দরকারি কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন :
- ভাইভা বোর্ডে আপনার শিক্ষাগত কাগজপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে রখুন।আবেদনের সময় আপনার কাগজপত্র জমা দেওয়া থাকলেও নিয়োগকর্তারা যেকোনো সময় যেকোনো ডকুমেন্টস দেখতে চাইতে পারে।এছাড়া একটা পেন,জীবনবৃত্তান্ত ,সাদা কাগজ সাথে রাখবেন। সুন্দর ও পরিপাটি ফাইলে কাগজপত্র রাখুন আর ফাইল টেবিলে না রেখে নিচে অথবা হাতে রাখা ভালো।
- ক্লান্তি ভাব ঝেড়ে ফেলুন :
- ভাইভা বোর্ডে ক্লান্তি ভাব দূর করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে ভাইভা বোর্ডে আসতে ঘাম শুরু হয়।নিজেকে সতেজভাবে উপস্থাপন করতে অত্যন্ত আধা ঘণ্টা আগে ভাইভা বোর্ডে পৌছানোর চেষ্টা করবেন। এছাড়া সারারাত জেগে পড়ার কারণে ক্লান্ত ভাব আসে। নিজেকে একটিভ ভাবে প্রকাশ করার জন্য ভাইভার আগের রাতে ভালোমত ঘুমিয়ে সকাল ফ্রেশ হয়ে ভাইভা বোর্ডে যাওয়া উচিত।
- নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকা:
- ভাইভা বোর্ডে সঠিকসময়ে পৌছানো নিয়মানুবর্তিতার পরিচয়।অনেক সময় অনেকেই সময়ের পর ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হন যা তার অযোগ্য প্রমাণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ভাইভা বোর্ডে দেরি করে গেলে নিয়োগকর্তা আপনার ভাইভা নাও নিতে পারেন।তাই ভাইভা বোর্ডে সঠিক সময়ে পৌছানো অতি জরুরী।
- প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিন:
- ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের সময় সালাম দিবেন এবং অনুমতি নিয়ে রুমে প্রহেশ করুন।যতক্ষণ বসার অনুমতি না দেয় ততক্ষণ বসবেন না। আপনাকে যে পরীক্ষক প্রশ্ন করে তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন তাতে আপনার আত্নবিশ্বাস প্রকাশ পায়। অনেকেই প্রধান পরীক্ষকের দিকে তাকিয়ে থাকেন যেটা উচিত নয়।
- আঞ্চলিকতা পরিহার করুন :
- ভাইভার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন আঞ্চলিকতা না আসে। অনেকের কথায় কথায় আঞ্চলিকতা চলে আসে এটা নিয়োগকর্তারা বুঝতে পারে না বুঝলেও অগ্রাহ্য করে। তাই কথা বলার সময় শুদ্ধ করে উচ্চারণ করতে হবে,ইংরেজি উচ্চারণেও সচেতন হতে হবে।
- প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা নিন:
- যে প্রতিষ্ঠানে ভাইভা দিতে যাচ্ছেন তার সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে যাবেন। অনেক সময় নিয়োগকর্তারা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রশ্ন করে। সম্ভব হলে ভাইভা বোর্ডে কারা থাকবে তাদের সম্পর্কে জেনে যাওয়াও ভালো।
- ধুমপান করে ভাইভা দিতে যাবেন না:
- ভাইভার আগে ধুমপান থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। ভাইভার সময় যদি নিয়োগকর্তারা আপনার মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ পায় তারা চরম বিরক্ত হবে এবং আপনাকে অভদ্র মনে করবে। ধুমপান করে ভাইভা দেওয়া অযোগ্য হওয়ার একটা প্রমাণ ।
- সংক্ষেপে ও হেসে উত্তর দিন :
- ভাইভা বোর্ডে শুধু যে প্রশ্ন করা হয়েছে শুধু সে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ভাইভা যেমন দীর্ঘায়িত করা যাবে না তেমনি গোমড়ামুখো হয়ে বসে থাকা যাবে না। নিয়োগকর্তারা যেমন বেশি কথা পছন্দ করে না তেমনি গোমড়ামুখোও পছন্দ করে না।
- উত্তেজিত হওয়া যাবে না :
- ভাইভা বোর্ডে অনেক সময় মানসিক স্থিতিশীলতা, সমস্যা সমাধানের যোগত্যা পরীক্ষার জন্য অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে থাকে রসময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।অনেক সময় আপনার ধৈর্য্য পরীক্ষার জন্য এক সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন করবে এ সময় কোনভাবেই মাথা গরম করা যাবে না।
- বিনীত ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করুন :
- বিণীত ভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সোজা হয়ে দিতে হবে। চেয়ারে হেলান না দিয়াই উত্তম,এতে চাকরি প্রার্থী সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হয়।ভাইভা শেষে হাত মেলাতে পারেন তবে অবস্থা বুঝে।
- রুটিনমাফিক কাজ করুন :
- যেকোনো ভাইভাতে পূর্ব প্রস্তুতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ভাইভার পূর্বে নির্দিষ্ট রূটিন তৈরি করে প্রস্তুতি নেন।দরকার হয় ।ভাইভার আগে দরকার হয় আয়নার সামনে প্রাক্টিস করুন।
- মুদ্রাদোষ পরিহার করুন :
- অনেকের অনেক ধরনের মুদ্রা দোষ থাকে। যেমন এক কথা বার বার বলা, কথার শেষে বিভিন্ন শব্দ করা অথবা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা,তোতলানো, পা ঝাকানো,জিভ কামড়ানো, নাকে হাত দেওয়া আরও অনেক কিছু। ভাইভা এ ধরনের মুদ্রাদোষ অনেক বিরক্তিকর। তাই এধরনের কোন সমস্যা থাকলে ভাইভার আগে তা পরিহার করার চেষ্টা করুন।
- নিজের সাবজেক্ট সম্পর্কে ধারণা রাখা:
- আপনি যে সাবজেক্টে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে। নিয়োগকর্তারা সাবজেক্ট সম্পর্কে প্রশ্ন করলে আপনি না পারলে তা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিবে।
- নিজের নাম ও জন্মস্থান সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানা:
- আপনার নামের অর্থ এই নামের বিখ্যাত মানুষ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন। এছাড়া জন্মস্থানের নামকরণ,ইতিহাস,জনসংখ্যা, ঐতিহাসিক স্থান, প্রধান কৃষিজ পণ্য ইত্যাদি সম্পর্কে মুখস্থ করতে হবে।
- মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না:
- ভাইভার সময় নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে কোন মিথ্যা কথা বলবেন না।মিথ্যা আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। মিথ্যা ধরা পড়লে আপনি ত চাকরি পাবেনই না আবার চাকরি পাওয়ার পর ধরা পড়লেও বিপদ।
পোশাক নির্বাচন
কী ধরনের ড্রেস কোড অনুসরণ করতে হবে:
উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও চাকরির ভাইভাতে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে পোশাক । ভাইভাতে আলাদা ড্রেস কোড আছে যেগুলা না মানলে চাকরির জন্য টেকা কঠিন হয়ে পড়ে।
কেমন পোশাক পরবেন:
চাকরির ইন্টারভিউতে ফরমাল ও মানানসই পোশাক পরতে হয় । বেশি কালারফুল ড্রেস পরা উচিত নয়। ছেলেরা সাদা সার্ট, কালো প্যান্ট, কালো সুজ পরতে পারেন। মেয়েরা শাড়ি সহ সালোয়ার কামিজ অথবা প্যান্ট শার্ট পরতে পারেন তবে অবশ্যই ফরমাল হতে হবে।
কি কি পোশাক পরবেন না:
ভাইভাতে টি-শার্ট, জিন্স, ফতুয়া পরা যাবে না। এছাড়া জাকজমকপূর্ণ জামাকাপড় পরা যাবে না।
কি রঙের পোশাক পরবেন:
চাকরির ইন্টারভিউতে সাদা, গাড় ধূসর, গাড় নীল, বাদামী বা কালো পোশাক পরা ভালো । এগুলোর মধ্যে আপনার রুচির সাথে মিলে সেটা পরে যেতে পারেন।
কেমন হবে সুজ:
ছেলেরা কালো রঙের সুজ পরতে পারেন । তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি স্ট্যাইলিশ না হয়।মেয়েরা হাই হিল এড়িয়ে চলাই ভালো । তবে খেয়াল রাখতে হবে জুতাই যেন হাটলে শব্দ না হয়।
আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে :
ছেলেদের চুল ছোট রাখতে হবে,মেয়েদের অতিরিক্ত মেকআপ করা যাবে না।সর্বপরি, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন ভাবে ভাইভা দিতে যেতে হবে।
ভাইভাতে বর্জনীয় বিষয়:
কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো ভাইভার সময় অবশ্যই বর্জন করতে হবে যদি ভালোভাবে ভাইভা দিতে চান।বর্জনীয় বিষয়গুলো হলো:
- বিদখুটে ধরনের পোশাক ও গাড় রঙের চশমা পরিহার করা।
- ভাইভা বোর্ডে হাই তোলা ও দাঁত খোঁচানো।
- ভাইভা বোর্ডে গাঁ চুলকানো, অযাথা হাত- পা নাড়ানো ইত্যাদি।
- মনোযোগ দিয়ে কথা না শোনা ও কথার মাঝখানে কথা বলা।
ভাইভার আগে যদি উপরের বিষয়গুলো জেনে নেন, তবে ভালোভাবে ভাইভা দিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।