চাকরির জন্য বাংলা জীবন বৃত্তান্ত কিভাবে লিখতে হয়
জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরার জন্য সিভি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কলেজ লাইফ থেকে শুরু করে চাকরি, রাজনৈতিক কারণে সবজায়গায় সিভি লিখতে হয়। সিভি লেখার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। নিয়ম না জানার কারণে অনেক সময় সিভি বাতিল হয়ে যাই। অনেক সময় অনেকেই সিভি লেখার নিয়ম না জানার কারণে হুবুহু অন্যের জীবনবৃত্তান্ত কপি করে জমা দেই, যার ফলে সিভি গহণযোগ্য হয় না।সিভি আপনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন নাকি অন্যের টা কপি করে পাঠক একপলক সিভি দেখলেই বুঝতে পারবেন। অন্যের সিভি আর আপনার সিভি কখনও এক হতে পারে না। কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি চাকরি দেওয়ার আগে প্রার্থীর সিভি দেখে তার সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যায়। চাকরি দাতা নিশ্চয়ই তাকে চাকরি দিবে না যে নিজের সিভি লিখতে পারে না। সময় থাক-তে আসুন জেনে নিই কিভাবে সিভি লিখতে হয়।
সিভি কি : আসুন প্রথমে জেনে নিই সিভি বলতে কী বোঝায়। সিভির পূর্ণ রূপ হচ্ছে Curriculum Vitae বা জীবন বৃত্তান্ত।বর্তমানে বেশীরভাগ সিভি ইংরেজিতে লেখা হয় তবে অনেক সময় বাংলায় ও সিভি লেখা হয়।সিভি মূলত ২/৩ পৃষ্ঠার জীবন বৃত্তান্ত যেখানে আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, নাম, ঠিকানা সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় উল্লেখ থাকে। শুধু চাকরির ইন্টারভিউ নয় একাডেমিক ও রাজনৈতিক বিষয়েও সিভি লাগে।
সিভিতে কোন কোন বিষয় উল্লেখ করবেন : কাজের ধরন অনুসারে সিভি ভিন্ন হতে পারে। তবে ব্যাসিক কিছু ইনফরমেশন আছে যেগুলা সব সিভিতে একরকম থাকে। অপ্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দিয়ে সিভি বড় করার দরকার নাই। কারণ আপনি যত সংক্ষেপে নিজের মূল ইনফরমেশন তুলে ধরতে পারবেন আপনার সিভি তত স্মার্ট ও আকর্ষণীয় হবে।
যেসব বিষয় সব ধরনের সিভিতে লাগে সেগুলো আলোচনা করা হলো
- নাম ও ঠিকানা: সিভির শুরুতে সার্টিফিকেটে যে নাম আছে সে নাম দিতে হবে। কোন ধর৫নের ছদন্মাম দেইওয়া যাবে না। সংক্ষেপে ঠিকানা দিতে হবে যেখানে সহজে চিঠি পাঠালে পৌছাতে পারে। এক্ষেত্রে পোস্টের নাম ও পোস্ট কোড দেওয়া যেতে পারে। বর্তমান আধুনিক যুগে মোবাইল নাম্বার ও মেইল আইডি দেওয়া উচিত।নাম ও ঠিকানা সেকশনে নিচের তথ্যগুলো দিবেন:
- সার্টিফিকেট অনুসারে নিজের নাম
- মোবাইল বা ফোন নাম্বার
- ইমেইল এড্রেস
- পূর্ণ ঠিকানা ( পোস্ট অফিসের ঠিকানা গুরুত্বপূর্ণ)
- ফেসবুক প্রোফাইল ও দেওয়া যেতে পারে।
- সারাংশ : আপনি যে পদের চাকরির জন্য আবেদন করেছেন, চাকরি পেলে কিভাবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং কিভাবে অভিস ম্যানেজ করবেন এসব বিষয়ে ২/৩ লাইন লিখতে হবে। এটাকে বলা হয় Personal Statement.
- পেশাগত কাজের অভিজ্ঞতা: আপনি যে পেশার জন্য আবেদন করেছেন সে পেশায় পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা আছে কিনা বা এ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে কিনা তা লিখতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা : শিক্ষাগত যোগ্যতা সিভির একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।স্কুল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আপনার যত একাডেমিক সার্টিফিকেট আছে সব গুলো পরিষ্কারভাবে লিখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, বিভাগ,গ্রেড,বোর্ড সব কিছু পরিষ্কারভাবে লিখতে হবে।এছাড়া আপনি কোথাও ইন্টার্ন করার অভিজ্ঞতা থাকলে লিখতে হবে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোন সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলে সনদ থাকলে তা উল্লেখ করতে পারেন।শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে যেসব বিষয় উল্লেখ করতে হবে..
- যেকোনো প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা থাকলে।
- গ্রাজুয়েশনের নাম( এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স-মাস্টার্স)
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও শিক্ষাবোর্ড
- প্রশিক্ষণের সময়কাল
- পরীক্ষার সন ও রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার সনদ।
- অন্য কোন একাডেমিক সনদ থাকলে।
- ভাষাগত দক্ষতা: আমাদের দেশে সাধারণত বেশিরভাগ চাকরিতে বাংলার সাথে সাথে ইংরেজি জানা বাধ্যতামূলক ।এক্ষেত্রে আইএলটিএস বা টোয়েফলে অংশ নিলে তার স্কোর উল্লেখ করতে হবে। অন্য কোন ভাষা জানা থাকলে সেগুলোও উল্লেখ করতে হবে।
- কম্পিউটার – দক্ষতা: বর্তমান অধিকাংশ চাকরিতে কম্পিউটার জানা বাধ্যতামূলক। সব চাকরিতে কম্পিউটারের ব্যাসিক জানতে হয়। আইটি বিষয়ের চাকরি হলে কম্পিউটারের সব বিষয়ে উল্লেখ করতে হবে।কম্পিউটার দক্ষতা হিসেবে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে সেগুলো হলো :
- Report writing and Editing
- Communication skills
- PowerPoint, MSword skills
- Data entry proficiency
- Others software skills
- রেফারেন্স : আপনি সম্প্রতি যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরছেন সেখানকার কোন পরিচিত শিক্ষকের নাম ও পদবি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করলে ভালো হয় কারণ আপনার সম্পর্কে তারাই ভালো বলতে পারে।রেফারেন্স হিসেবে যার নাম দেওয়া হবে অবশ্যই তার সাথে আগে যোগাযোগ করে নিবেন এবং তাকে ব্যপারটি বলবেন কারণ চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে রেফারেন্স এ যার নাম থাকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়।
- অঙ্গীকারনামা: আপনি সিভিতে যেসব তথ্য দিয়েছেন সবগুলো নির্ভুল এবং সঠিক এ বিষয়ে অবশ্যই আপনাকে অঙ্গীকার করতে হবে। সিভিতে ভুল তথ্য দিলে সিভি বাতিল হতে পারে তাই সাবমিট করার আগে অবশ্যই ভালো করে দেখে নিবেন। মনে রাখবেন চাকরিদাতার আইনগত অধিকার আছে আপনার তদন্ত করার।
- সিভিতে ছবি যুক্ত করা: অবশ্যই সদ্য তোলা ছবি ব্যবহার করবেন। যে ছবিতে আপনাকে পরিষ্কার বোঝা যাই সেই ছবি ব্যবহার করবেন। চশমা ছাড়া,পরিপাটি পোশাকে ছবি তুলবেন কারণ ভাল ছবি উন্নত মানসিকতার পরিচয় দেয়।
- স্বাক্ষর ও তারিখ : উপরের সবকিছু ঠিক থাকলে নামের উপর স্বাক্ষরসহ তারিখ দিতে হবে।
সিভি লেখার বর্জনীয় বিষয়: চাকরি পাওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে সিভি।সঠিকভাবে সিভি লিখতে না পারলে চাকরিদাতার নেগেটিভ ধারণা হয়। নির্ভূলভাবে সিভি লেখার জন্য কয়েকটি বিষয় বর্জন করতে হবে।
সেগুলো হলো :
- সিভির নামের সাথে অবশ্যই সার্টিফিকেটের সাথে মিল থাকতে হবে। ডাকনাম লেখা যাবে না
- সিভির জন্মতারিখের সাথে একাডেমিক সার্টিফিকেটের মিল থাকতে হবে।
- সংক্ষেপে ঠিকানা না লিখে পরিপূর্ণ ঠিকানা লিখতে হবে।
- অফিশিয়াল ই– মেইল এড্রেস ব্যবহার করতে হবে
- একাধিক নাম্বার যুক্ত করা যাবে না
- পেশাগত দক্ষতা লেখার সময় প্রফেশনালিজম দেখাবেন।
- চশমাযুক্ত ছবি না ব্যবহার করাই উত্তম।
- কোনভাবেই ভুল তথ্য দেওয়া যাবে না।
- সিভি যেন কোনভাবেই ২ পৃষ্ঠার বেশি না হয়।এক পৃষ্ঠা হলে ভালো হয়।
সিভির ফরমেট কেমন হওয়া উচিত : চাকরিদাতা আপনাকে না দেখেও সিভি দেখে আপনার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা হয়ে যায়।স্মার্ট সিভি চাকরিদাতার নিকট আপনাকে আকর্ষণীয় করে তোলে। সিভি বড় হলেই তথ্যবহুল হয় না। নিচের কয়েকটি নিয়ম আপনার সিভিকে গ্রহণযোগ্য করবে।
- সিভির দৈর্ঘ্য: সিভি লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন অংশ অধিক লম্বা না হয়। অল্প কথায় আপনাকে মূল বিষয় বোঝাতে হবে। কোন কিছু বেশি বোঝানোর জন্য সর্বোচ্চ ৩/৪ লাইন ব্যবহার করতে হবে। অল্প শব্দ বুঝাতে পারলে চাকরিদাতা আপনাকে বুদ্ধিমান মনে করবে।
- সিভি লেখার জন্য কোন ধরনের কাগজ ব্যবহার করবেন : আপনি অনলাইনে কিংবা প্রিন্ট করে সিভি পোস্ট করেন না কেন A4 সাইজ ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন হলে কাগজের চারপাশে পর্যাপ্ত মার্জিন করুন।
- কোন ফন্টে এবং কোন ফন্ট সাইজ ব্যবহার করবেন : আপনার সিভিকে আরও প্রফেশনাল করে তুলতে Arial,Caliberi, Times new Romans ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন। নরমাল লেখাগুলোতে ১০-১২ সাইজ এবং যেগুলো হাইলাইট করা উচিত সেগুলো ১৪-১৫ সাইজ ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া হাইলাইট গুলো Bold বা Italic করা যেতে পারে।
- Spelling and Gramer: সিভি অবশ্যই নির্ভূল এবং সঠিক শব্দযোগে তৈরী করতে হবে। এজন্য বার বার বানান চেক করতে হবে।
উপরের নিয়মগুলো মেনে সিভি লিখলে আপনার সিভিটি পাঠকের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করা যায়।